চন্দ্রনাথ মন্দির এলাকায় মসজিদ নির্মাণের গুঞ্জন: উত্তেজনার পর প্রশাসনের আশ্বাস
চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে অবস্থিত চন্দ্রনাথ পাহাড় হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের কাছে একটি ঐতিহাসিক তীর্থস্থান। সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সেখানে মসজিদ নির্মাণের দাবি নিয়ে আলোচনা শুরু হলে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়।
ঘটনার সূত্রপাত হয় এম এম সাইফুল ইসলাম নামের ঢাকার এক ব্যবসায়ীর ফেসবুক পোস্ট থেকে। পাহাড় ভ্রমণের পর তিনি লিখেছিলেন— দেশে মুসলমানদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকা সত্ত্বেও চন্দ্রনাথ পাহাড়ে মসজিদ নেই কেন, অথচ পর্যটকদের বেশিরভাগই মুসলিম। পরের পোস্টগুলোতে তিনি দাবি করেন, স্থানীয় আলেম সমাজের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলেছেন এবং হেফাজতে ইসলামের নেতা হারুন ইজহারের সাথেও সাক্ষাৎ করেছেন। এমনকি তিনি এক পোস্টে লিখেছিলেন— পাহাড়ের চূড়ায় মসজিদ নির্মাণ “৯০ শতাংশ নিশ্চিত”।
স্থানীয় প্রতিক্রিয়া ও উত্তেজনা
এই পোস্ট দ্রুত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে এবং হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দেয়। কারণ, চন্দ্রনাথ পাহাড়ে শত শত বছরের পুরনো মন্দির রয়েছে এবং এটি সনাতন ধর্মাবলম্বীদের প্রধান তীর্থস্থান। স্থানীয় সাংবাদিকরা জানান, হারুন ইজহারের সঙ্গে ছবিসহ পোস্ট প্রকাশের পর বিষয়টি আরও আলোচিত হয়।
কিছু মুসলিম ব্যবহারকারী ফেসবুকে মসজিদ নির্মাণে আর্থিক সহায়তার ইচ্ছাও প্রকাশ করেন। এতে হিন্দু ও মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট হওয়ার শঙ্কা তৈরি হয়।
হারুন ইজহারের বক্তব্য
যুবকের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে হারুন ইজহার বলেন, প্রকৃতপক্ষে কেউ তাঁকে মন্দির এলাকায় মসজিদ করার পরিকল্পনার কথা জানাননি। তাঁরা কেবল পর্যটকদের সুবিধার্থে নিকটবর্তী এলাকায় ইবাদতের জায়গা তৈরির কথা বলেছেন। তাঁর দাবি, এই বিষয়টি ঘিরে অনেক ভুল ব্যাখ্যা ও প্রোপাগান্ডা ছড়ানো হচ্ছে।
প্রশাসনের পদক্ষেপ
বিতর্ক ছড়িয়ে পড়ার পর উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশ কর্মকর্তারা মন্দির এলাকা পরিদর্শন করেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফখরুল ইসলাম স্পষ্ট করে জানান, চন্দ্রনাথ পাহাড়ে মসজিদ নির্মাণের কোনো অনুমতি নেই এবং এ বিষয়ে কোনো উদ্যোগও পাওয়া যায়নি। তিনি এটিকে একজনের ব্যক্তিগত ফেসবুক পোস্টের ফল বলে উল্লেখ করেন।
প্রশাসনের বিজ্ঞপ্তিতেও বলা হয়েছে, চন্দ্রনাথ মন্দির এলাকায় মসজিদ নির্মাণের কোনো কার্যক্রম চলছে না এবং এমন উদ্যোগ প্রশাসন অনুমোদন করবে না।
কেন গুরুত্বপূর্ণ চন্দ্রনাথ পাহাড়?
চন্দ্রনাথ পাহাড় হিন্দুদের কাছে একটি পবিত্র তীর্থস্থান। পাহাড়ের চূড়ায় শিবমন্দিরসহ অসংখ্য প্রাচীন মঠ-মন্দির রয়েছে। স্থানীয় বিশ্বাস অনুযায়ী, নেপালের এক রাজা প্রায় ১২০০ বছরেরও আগে এই শিবমন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। হিন্দু পুরাণ অনুসারে এখানেই রাম ও সীতার স্নানের কাহিনি জড়িয়ে আছে।
প্রতি বছর ফাল্গুন মাসে শিবচতুর্দশী মেলায় দেশ-বিদেশের হাজারো ভক্ত এখানে সমবেত হন। সাম্প্রতিক সময়ে পর্যটকের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় স্থানীয় স্রাইন কমিটি তীর্থস্থানের পরিবেশ সংরক্ষণে আরও কঠোর হওয়ার দাবি তুলেছে।
উপসংহার
একটি ফেসবুক পোস্ট থেকে শুরু হওয়া বিতর্ক অল্প সময়েই বড় আকার ধারণ করে। তবে প্রশাসনের তৎপরতায় পরিস্থিতি শান্ত হয়। সীতাকুণ্ড স্রাইন কমিটি ও স্থানীয় প্রশাসন আশ্বস্ত করেছে যে, চন্দ্রনাথ পাহাড়ে মন্দির এলাকায় কোনো মসজিদ নির্মাণের সুযোগ নেই এবং তীর্থস্থানের ঐতিহ্য অক্ষুণ্ণ থাকবে।